পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (Police Clearance Certificate বা PCC) হল একটি অফিসিয়াল ডকুমেন্ট যা বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক প্রদান করা হয় এবং এতে প্রমাণ করে যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কোনো ক্রিমিনাল মামলায় অভিযুক্ত বা সাজাপ্রাপ্ত নয়। এটি মূলত একজন ব্যক্তির চরিত্র যাচাইয়ের (Character Verification) একটি দলিল। একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশ রেকর্ডে কোনো অপরাধ বা মামলা নেই তা প্রমাণ করার একটি সরকারি নথি হল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
✅ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট কেন প্রয়োজন হয় ?
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সাধারণত নিচের উদ্দেশ্য গুলোর জন্য প্রয়োজন হয়:
- বিদেশ ভ্রমণ/ভিসা আবেদন (বিশেষ করে ওয়ার্ক ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা, ইমিগ্রেশন ইত্যাদি)
- বিদেশে চাকরি / চাকরির ভেরিফিকেশন
- বিদেশে স্থায়ী বাসস্থান (Permanent Residency) বা নাগরিকত্ব আবেদন
- আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরি
- দেশে বা বিদেশে উচ্চশিক্ষা / স্কলারশিপ
- নিবন্ধন / লাইসেন্সের আবেদন (যেমনঃ চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদ ইত্যাদি পেশায় )
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলীঃ-
১। আবেদনকারীর কমপক্ষে ৩ মাস মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট থাকতে হবে।
২। আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা হিসেবে পাসপোর্টে উল্লিখিত স্থায়ী কিংবা জরুরী ঠিকানার যে কোন একটি ব্যবহার করতে হবে এবং আবেদনকারীকে অবশ্যই ঐ ঠিকানার বাসিন্দা হতে হবে।
৩। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এম আর পি) এর ক্ষেত্রে যদি পাসপোর্টে ঠিকানা উল্লেখ না থাকে তবে ঠিকানার প্রমাণ স্বরূপ জাতীয় পরিচয় পত্র/জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র/স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এর সনদপত্রের ফটোকপি ১ম শ্রেণীর সরকারী গেজেটেড কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত করে দাখিল করতে হবে ।
৪। বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী কোন ব্যক্তির পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য তিনি যে দেশে অবস্থান করছেন সে দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস/হাইকমিশন কর্তৃক পাসপোর্টের তথ্য পাতার সত্যায়িত কপি তার পক্ষে করা আবেদনের সাথে দাখিল করতে হবে ।
৫। বিদেশগামী কিংবা প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক এবং বাংলাদেশে বসবাস করে স্বদেশে/বিদেশে প্রত্যাবর্তনকারী বিদেশী নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এই অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে ইস্যু করা হয়।
৬। বিদেশগামী কিংবা প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক যারা বাংলাদেশ ব্যতীত অন্য কোন দেশ থেকে পাসপোর্ট ইস্যু/ রি-ইস্যু করিয়েছেন তাদেরকে বাংলাদেশে আসার পর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিতে চাইলে সর্বশেষ এরাইভেল (Arrival) সিল সম্বলিত পৃষ্ঠাটির স্ক্যান কপি আবেদনের সাথে আপলোড করতে হবে।
৭। প্রবাসী আবেদনকারীগণ যার মাধ্যমে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ সংগ্রহ করতে চান তার নাম এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর উল্লেখ করে তাকে সত্যায়ন পূর্বক একটি অনুমতি পত্র (Authorization Letter) আবেদনের সাথে আপলোড করতে হবে। স্থানীয় আবেদনকারীর ক্ষেত্রেও সনদ গ্রহণের সময় সংগ্রহকারীকে অনুরূপ অনুমতি পত্রসহ প্রেরণ করতে হবে।
৮। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চাকুরী কিংবা অন্য কোন কাজে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হলে আপনি যে জেলার বাসিন্দা উক্ত জেলা ডিএসবি অফিস অথবা আপনার ঠিকানা যদি মেট্রোপলিটন এলাকায় হয় তাহলে উক্ত মেট্রোপলিটন এলাকার সিটি এসবি অফিসে যোগাযোগ করুন।
৯। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ডেলিভারি নিতে প্রার্থীর পাসপোর্টের কপি অথবা আবেদনের কপি সাথে নিয়ে আসতে হবে। এছাড়া প্রার্থী বিদেশে থাকলে সংশ্লিষ্ট এম্বাসি কর্তৃক সত্যায়িত/জাস্টিস অব পিস কর্তৃক সত্যায়িত অথোরাইজেশন লেটার আনতে হবে।
✅ কিভাবে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করবেন?
বাংলাদেশে বর্তমানে অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। আপনি ঘরে বসেই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
১। অনলাইনে যথাযথভাবে পূরণকৃত আবেদন পত্র ।
২। ১ম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত পাসপোর্টের তথ্য পাতার স্ক্যানকপি
অথবা
বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশী নাগরিকগনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক সত্যায়িত পাসপোর্টের তথ্য পাতার স্ক্যানকপি
অথবা
বিদেশী নাগরিকদের ক্ষেত্রে নিজ দেশের জাস্টিস অব পিস (Justice of Peace) কর্তৃক সত্যায়িত পাসপোর্টের তথ্য পাতার স্ক্যানকপি।
৩। বাংলাদেশ ব্যাংক/ সোনালী ব্যাংকের যে কোন শাখা থেকে (১-৭৩০১-০০০১-২৬৮১) কোডে করা ৫০০/- (পাঁচশত) টাকা মূল্যমানের ট্রেজারী চালান অথবা অনলাইনে ক্রেডিট/ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নির্ধারিত সার্ভিসচার্জ সহ ফি প্রদান।
(বি:দ্র: মোবাইল ব্যাংকিং সেবা যেমন- বিকাশ/নগদ/রকেট/উপায় এর মাধ্যমেও ফিস প্রদান করা যায়।)
আবেদনের নিয়মাবলী
ধাপ : ১
অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে যে কেউ নিজের জন্য অথবা অন্যের পক্ষে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এর জন্য আবেদন করতে পারবে। নিবন্ধন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
ধাপ : ২নিবন্ধিত ব্যবহারকারী অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সাইটে লগ-ইন করার পর Apply মেনুতে ক্লিক করে আবেদনপত্রটি যথাযথভাবে পূরণ করুন।।
ধাপ : ৩
আবেদন ফরমের প্রথম ধাপে ব্যক্তিগত বিস্তারিত তথ্য, দ্বিতীয় ধাপে বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা পূরণ করুন। আপনার বর্তমান ঠিকানা যে জেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত সেই ঠিকানায় পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হবে।
ধাপ : ৪
আবেদন ফরমের তৃতীয় ধাপে প্রয়োজনীয় ডকুমেণ্টসমূহের স্ক্যান কপি আপলোড করুন।
ধাপ : ৫
আবেদন ফরমের চতুর্থ ধাপে আপনার এন্ট্রিকৃত সকল তথ্য দেখানো হবে। আবেদনে কোন ভুল থাকলে তা পূর্ববর্তী ধাপসমূহে ফেরত গিয়ে পরিবর্তন করা যাবে। তবে চতুর্থ ধাপে আবেদনটি সাবমিট করার পর আর কোন পরিবর্তন করার সুযোগ থাকবে না।
ধাপ : ৬
নির্ধারিত ফিস ৫০০/- টাকা পরিশোধ করুন। আপনার পছন্দ মত উল্লেখিত যে কোনো মাধ্যমে ফিস পরিশোধ করতে পারবেন। ফিস পরিশোধের পর চালানের কপি ডাউনলোড করে সেটাকে নির্দিষ্ট জায়গায় আপলোড করুন। তারপর পরবর্তী নির্দেশনা অনুসরণ করে সামনে এগিয়ে যান। সব শেষে ফাইনালী আপনার আবেদন সাবমিট করুন। এবং আবেদনের কপিটি ডাউনলোড করুন। এই আবেদনের কপি, চালান কপিসহ প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস সংগ্রহ করে রাখুন। কারণ এগুলো আপনার পরবর্তীতে প্রয়োজন হবে।
ভেরিফিকেশন প্রসেস:
- আপনার ঠিকানা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ভেরিফিকেশন করবেন। প্রয়োজন হলে তারা সরাসরি আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
স্ট্যাটাচ চেক ও সার্টিফিকেট ডাউনলোড:
আপনার আইডি পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করে আপনার ড্যাসবোর্ডে গিয়ে আপনার আবেদনের স্ট্যাটাচ চেক করতে পারবেন। সাধারণত ৭-১০ কার্যদিবসের মধ্যে ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ইস্যু হয়। তবে সময় এর কম বেশি লাগতে পারে। ভেরিফিকেশন শেষে, অনলাইনে পিডিএফ আকারে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের আবেদন পদ্ধতি শুরু থেকে বিস্তারিত নিচের ভিডিওতে দেখানো হয়েছে। ভিডিওটা সম্পূর্ণ দেখলে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন এবং আবেদন করার সম্পূর্ণ টিউটোরিয়াল স্টেপ-বাই-স্টেপ দেখতে পারবেন।
আজ এ পর্যন্তই। আগামীতে অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে হাজির হবো। ধন্যবাদ সবাইকে।
মোঃ রবিউল ইসলাম।