বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত ওয়েবসাইট গুলোর মধ্যে অন্যতম ফেসবুক।চলুন জানা যাক এর উপকারিতা ও অপকারিতা

আইটি বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংবাদ কম্পিউটার-ইন্টারনেট তথ্য প্রযুক্তি ফিচার-বিশেষ প্রতিবেদন সংবাদ
Share on Social Media
 
    
   

শেখ এহিউল ইসলাম,খুলনাঃ বর্তমান বিশ্বের সামাজিক যোগাযোগের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক। এই ভার্চুয়াল নেটওয়ার্কে এখন সংযুক্ত রয়েছে ২৫০ কোটিরও বেশি মানুষ। গত ২০১৯ সালের শেষের দিকে আইএনএস এর এক খবরে এ তথ্য জানা যায়। তবে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। ফেসবুক এখন বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত ওয়েবসাইট গুলোর মধ্যে একটি । যে গুগল ব্যতীত ইন্টারনেট কল্পনা করা যেত না, বর্তমানে সেই গুগলকেও টপকে যেতে বসেছে ফেসবুক।

ফেসবুক বিভিন্নভাবে যেমনি মানুষের, সমাজের, দেশের ও মানবতার কল্যাণে ভূমিকা রাখছে তেমনি এর অপব্যবহারে ঘটছে নানা অপ্রীতিকর, অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক ঘটনা। লঙ্ঘিত হচ্ছে আইন, হ্রাস পাচ্ছে নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ।

(তরুণ-তরুণীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে সেলফি তুলে ফেসবুকে প্রচারের জন্য।)

শুরু থেকেই বাংলাদেশে এই নেটওয়ার্কটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিয়মিত ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সাথে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে মতবিনিময় করে ফেসবুকের উপকার ও অপকার সম্পর্কে যে ধারণা পাওয়া যায়, তা নিম্নে দেওয়া হলোঃ-

ফেসবুক ব্যবহারের উপকারিতাঃ
১. ফেসবুকের মাধ্যমে সহজে অল্প খরচে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা যায়।
২. ফেসবুক আমাদের সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সহায়তা করে। বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার মত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সহজেই সংযোগ স্থাপনে সাহায্য করে। ৩. ফেসবুকের মাধ্যমে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পুরনো বন্ধুদের খুঁজে পাওয়া যায় এবং তাদের সাথে সহজে সংযুক্ত হওয়া যায়, মতবিনিময় করা যায়।
৪. বিদেশে অবস্থানকারী বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে অতি সহজে কম খরচে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়।
৫. এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট ইত্যাদি বিষয়ে জানা যায়।
৭. অবসরের বন্ধু হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ অবসর সময় কাটানোর অন্যতম একটা মাধ্যম হিসাবে কাজ করে।
৮. ফেসবুক পেইজ থেকে ভালো ভালো লেখকের কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প সম্পর্কে জানা ও পড়া যায়।
৯. দেশে কখন, কোথায় কী হচ্ছে তা জানার জন্য এখন আর পত্রিকায় মুখ গুজে বসে থাকতে হয় না। বিভিন্ন পেইজে ও অনেকের স্ট্যাটাসে সমসাময়িক সারা পৃথিবীর সব খবর জানা যায়।
১০. ফেসবুক ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারলে এটি হতে পারে আপনার রোমান্টিকতার কেন্দ্র বিন্দু। আপনি খুঁজে পেতে পারেন আপনার জীবন সঙ্গিকে।
১১. মন খারাপের সময় ফেসবুকে এসে অনেক কমেডি পেইজের পোস্ট পড়ে মন ভালো করা যায়।
১২. ফেসবুক পেইজ থেকে জ্ঞান অর্জন করা যায়। অনেকে একাডেমিক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জ্ঞান অর্জনের জন্য বিভিন্ন ফেজবুক পেইজে বিচরণ করেন।
১৩. বহু চাকরিপ্রার্থীর জন্য সুযোগ হিসাবে কাজ করে ফেসবুক। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়োগের খবর অনলাইনে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন। যারা সেসব প্রতিষ্ঠানের পেইজের সাথে যুক্ত থাকেন তারা সহজেই নিয়োগের খবরটি পেয়ে যায়।
১৪. নিজের ইমেজ বাড়ানোর কাজে ফেসবুক ব্যবহার করা যায়।
১৫. ফেসবুক ভিত্তিক অনেক ধর্মীয় পেইজ রয়েছে। সেখান থেকে কোরআান, হাদিস, ইজমা কিয়াস ও ফতোয়া সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করা যায়।
১৬. এ ছাড়া বিনোদনের বড় ফ্লাটফর্ম হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে ফেসবুক।

ফেসবুক ব্যবহারের অপকারিতাঃ

১. ফেসবুকে একজন ব্যক্তির একাধিক ভুয়া পরিচয় (ফেক আইডি) রয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন বখাটে ছেলেরা মেয়ে হিসাবে ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বিভ্রান্ত করে থাকে।
২. নিয়মিত ফেসবুক ব্যবহারকারীর কাজের একাগ্রতা নষ্ট হয়। সে আচরণে উগ্র, চঞ্চল, কাজের প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়তে পারে। যদিও এটা ব্যবহারের ফলে তৎক্ষণাৎ প্রশান্তি লাভ করে।
৩. এর মাধ্যমে ছেলে-মেয়েরা পরস্পর পরিচিত হয়ে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। এতে করে অনেক ছেলেমেয়ে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আবার অনেকে প্রতারিত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এমনকি অনেক তরুণীকে পতিতালয়ে বিক্রি, হত্যা, গুমের মতো ঘটনার নজিরও রয়েছে।
৪. ফেসবুকের মাধ্যমে অনেক বিবাহিতরাও পরকীয়া প্রণয়ের ফাঁদে পড়ে সুখের সংসারে অশান্তি ডেকে আনছে এবং পরিশেষে বিবাহ বিচ্ছেদের মত ঘটনাও ঘটছে।
৫. সবচেয়ে ক্ষতি হচ্ছে স্কুল কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের। তারা অনেকে ফেসবুকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। পড়াশুনা বাদ দিয়ে দিনরাত ফেসবুক নিয়ে মাথা গুজে পড়ে থাকে।
৬. বয়স্করাও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। তারাও অনেকে সংসারের গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম বাদ দিয়ে ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকেন।
৭. এটা ব্যবহার করার ফলে সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় এবং সময়ের বিরাট অংশ জীবন থেকে অপচয় হয়।
৮. ফেসবুক অনেক ক্ষেত্রে প্রতারণার ফাঁদ হিসাবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
৯. ফেসবুকে অনেকে আপত্তিকর ছবি পোস্ট দেয়, আজেবাজে ও অশ্লীল মন্তব্য করে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে থাকেন।
১০. মোটকথা এই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তরুণ-যুবসমাজ শিক্ষার চেয়ে ধ্বংসের দিকেই বেশি এগিয়ে যাচ্ছে।

ফেসবুক যদিও একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথাপি নিউটনের তৃতীয় সূত্রটির মত বলতে হয় ‘প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে’৷ অতএব একে পেশা বা নেশা হিসাবে গ্রহণ করলে এটা নেশা আর ভালো কাজে ব্যবহার করলে এটা কল্যাণকর। কাজেই শুধুমাত্র মতবিনিময়, যোগাযোগ রক্ষা, তথ্য আদান-প্রদান, তথ্য প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রভূমি হিসাবে ফেসবুক  কে গ্রহণ করা উচিত।

Written by Sheikh Ahiul Islam,  Former Divisional Officer at Bangladesh Forest Research Institute, Chittagong.

Date: 30-09-2020

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *