খুলনার ঐতিহ্যবাহী চুইঝালের গুনাগুণ, প্রাপ্তিস্থান ও ব্যবহার প্র্রক্রিয়া।

ফিচার-বিশেষ প্রতিবেদন শিক্ষা সংবাদ সংবাদ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
Share on Social Media
 
    
   

শেখ এহিউল ইসলাম, খুলনা।

খুলনার ঐতিহ্যবাহী খাবারের কথা আসলেই সবার প্রথমে আসে চুই ঝালের কথা। চুই ঝালে রান্না গরুর মাংস কিংবা খাসির মাংস একনামে বিখ্যাত। দুই দিন পরই ঈদুল আযহা। গরু ছাগল কোরবানি হবে। চুইঝালের চাহিদা বেড়েছে। দৌলতপুর বাজারে চুইঝালের ছড়াছড়ি দেখতে পেলাম। আসুন জেনে নেই এই চুইঝাল কি?

চুইঝাল বা চইঝাল লতাজাতীয় এক প্রকার উদ্ভিদ। চুইঝালের বৈজ্ঞানিক নাম Piper chaba। এটি একটি অর্থকরী ফসল। লতানো গাছটি অবলম্বন পেলে ৪০ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত বাড়তে পারে। পাতা ২ থেকে ৩ ইঞ্চি লম্বা পান পাতার মতো হয়। এটি পিপুলের পাতার লতার সাথেও বেশ সামঞ্জস্য পাওয়া যায়। অন্য গাছের সাথে আশ্রয় নিয়ে এটি বেড়ে উঠে। তবে আম, কাঁঠাল, মেহগনি, সুপারি, শিমুল, নারিকেল গাছে ভালো হয়। আমাদের দেশের কিছু আগ্রহী চাষি নিজ উদ্যোগে অনেক দিন আগ থেকেই চুইঝাল চাষ করে আসছেন। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরায় চুইঝাল বেশ জনপ্রিয় এবং দেশের সিংহভাগ চুইঝাল এ অঞ্চলে আবাদ হয়।

চুইঝালের কাণ্ড ধূসর এবং পাতা পান পাতার মতো সবুজ রঙের। এর কাণ্ড, শিকড়, শাখা, প্রশাখা সবই মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চুই সাধারণতঃ দুই প্রকার। একটির কাণ্ড আকারে বেশ মোটা ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার, অন্যটির কান্ড চিকন, আকারে ২.৫ থেকে ৫ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। বৃহত্তর খুলনা এলাকার হাট বাজারে এটি বেচাকেনা হয়ে থাকে। মোটা কান্ডের চুইঝালের প্রতি কেজি মূল্য ১০০০-১২০০ টাকা। চিকন কান্ডের চুইঝালের কেজি প্রতি মূল্য ৪০০-৬০০ টাকা।

আমাদের দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে চুইঝালের কান্ড ও শিকড় রান্নার সাথে ব্যঞ্জন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে গরু ও খাসির মাংসে বেশি আয়েশ করে রান্না হয়। এটি খুবই মুখরোচক খাবার। চুইঝাল দিয়ে রান্না করা মাংসের স্বাদই আলাদা। মাছের সাথে, ডালের সাথে মিশিয়েও রান্না করা যায়।

ঔষধি গুণঃ
চুইঝালের কাণ্ড, শিকড়, পাতা, ফুল, ফল, সবই ভেষজগুণ সম্পন্ন। শিকড়ে থাকে দশমিক ১৩ থেকে দশমিক ১৫ শতাংশ পিপারিন। এসব উপাদান মানব দেহের জন্য খুব উপকারী।

১. এটি গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
২. খাবারের রুচি বাড়াতে এবং ক্ষুধামন্দা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
৩. পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ সারাতে চুইঝাল অনেক উপকারী।
৪. স্নায়ুবিক উত্তেজনা ও মানসিক অস্থিরতা প্রশমন করে।
৫. ঘুমের ওষুধ হিসেবে কাজ করে এবং শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে এবং শরীরের ব্যথা সারায়।
৬. সদ্য প্রসূতি মায়েদের শরীরের ব্যথা দ্রুত কমাতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
৭. কাশি, কফ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও রক্তস্বল্পতা দূর করে।
৮. মাত্র এক ইঞ্চি পরিমাণ চুই লতার সাথে আদা পিষে খেলে সর্দি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এটি লতার কাটিং দিয়ে বংশবিস্তার করা যায় এবং ফলন দ্রুত পাওয়া যায়। আরোহী গাছের গোড়ায় সামান্য গোবর মাটি মিশিয়ে লতার ১টি গিট মাটির নিচে রোপণ করলে ক’দিন পরেই বাড়তে শুরু করে। ১০ থেকে ১২ মাসের মধ্যেই লতা কাটা যায়। সাধারণ যত্নেই চুই বেড়ে ওঠে। তাই আসুন আমরা বাড়িতে অন্য গাছের সাথে চুইঝালের আবাদ করে পরিবারের চাহিদা পূরণ করি।

 

Written by Sheikh Ahiul Islam, Former Divisional Officer at Bangladesh Forest Research Institute, Chittagong.

Date: 07/08/2020

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *