ব্যায়াম করা আমাদের সবার জন্যই খুব জরুরি। এখন না হয় আপনার বয়স কম এবং সহজেই শরীরটা ঝরঝরে আছে। শত অনিয়মেও শরীরটা দিব্যি চলছে। কিন্তু একটু যখন বুড়িয়ে যেতে শুরু করবেন, তখন কি হবে? শরীরের ওপর যত অত্যাচার-অনিয়ম করেছেন সব কিছুর শোধ কিন্তু আপনার শরীর নিতে শুরু করবে এবং তখন আর নিয়ম মাফিক না চলে উপায় রইবে না।
যারা যৌবনের মধ্যে অথবা শেষের দিকে চলে গেছেন তাদের জন্য সবচাইতে বেশি প্রয়োজনীয় হলো ব্যায়াম। কিন্তু প্রাত্যহিক জীবনে কতশত কাজের ব্যস্ততার ভিড়ে আর ব্যায়াম করা হয়ে ওঠে না আমাদের অনেকেরই। ব্যায়ামের উপদেশ দিলে সবারই হুবহু একই অজুহাত, “সময় কোথায়?!” অথচ ব্যায়াম করতে খুব বেশি সময় বা ঝামেলা করতে হয় না। দৈনিক এক ঘণ্টা সময় দিলে সহজেই অনেকটা ব্যায়াম করে ফেলা যায়। আর এক ঘণ্টা না পেলে কি হয়েছে? এক মিনিট সময় আছে তো আপনার, সেটাই যথেষ্ট !
সল্ট লেক সিটির উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সম্প্রতি আমেরিকান জার্নাল অফ হেলথ প্রোমোশনে প্রকাশ করেছেন যে, এক মিনিটের ব্যায়ামেও শরীরের অনেকটাই উপকার হয়। কত আজে বাজে কাজে এক মিনিট ব্যয় করে থাকি আমরা ! ব্যায়াম কেন করবো না- এই অজুহাত দিতে দিতেই তো ব্যয় হয়ে যায় পুরো একটা মিনিট।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটা মিনিট ব্যায়ামের সুযোগ তো পাওয়াই যায়। সেই সুযোগটিকে কাজে লাগান। অফিসের যাবার পথে বাস একটুর জন্য ফেল করেছেন? বাসটি দূরে চলে যাবার আগেই তার পেছন পেছন দৌড়ে তাকে ধরে ফেলুন ! অফিসের কাজে ভবনের অন্য কোনও তলায় যেতে হচ্ছে? লিফটের চিন্তা বাদ দিয়ে সিঁড়ি ভাঙ্গুন।
এইটুকু ব্যায়ামে আপনার কাজে তো কোনও অসুবিধে হবেই না বরং কিছু পরিমাণ ক্যালোরি ক্ষয় হওয়ার ফলে কতটা যে উপকার হবে তা আপনি কিছুদিন পরেই টের পাবেন ! আর যদি প্রতি ঘণ্টাতেই এমন একটা করে মিনিট ব্যায়াম করতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই!
মুটিয়ে যাবার প্রবণতা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার, লিভারের সমস্যা, কিডনির সমস্যা ইত্যাদি কমাতে ব্যায়ামের জুড়ি নেই। কিন্তু এত সুবিধে থাকার পরেও ব্যায়াম করতে অনীহা আমাদের।
প্রচুর পরিমাণে আমেরিকানদের মধ্যে মুটিয়ে যাবার প্রবণতা দেখা দেবার পর সে দেশের ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস ২০ থেকে ৫৯ বছর বয়সী নাগরিকদের অনুপ্রেরণা দেয় সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট করে ব্যায়াম করতে।
এতে উপদেশ দেওয়া হয় দিনে ১০ মিনিট করে তিনবার ব্যায়াম করাটাই যথেষ্ট বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত থাকতে এবং ওজন কমাতে। কিন্তু এই নিয়মটা মেনে চলে ৪ শতাংশেরও কম মানুষ। কেন? সময়ের অজুহাত। এ কারনেই এই সাম্প্রতিক গবেষণাটি জরুরি। এই গবেষণার নেতৃত্বদানকারী অর্থনীতিবিদ ক্যাথেরিন যিক এ বিষয় নিয়ে আরও গভীরতর পর্যবেক্ষণ করেন।
১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়সী সাড়ে চার হাজার মানুষের ব্যায়ামের অভ্যাস পর্যবেক্ষণ করে তারা দেখেন, এক মিনিট লম্বা কিন্তু বেশ জোর দিয়ে করা ব্যায়াম তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বেশ ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। তবে এগুলোতে বেশ গায়ের জোর খাটাতে হয় যেমন জোরে জোরে দৌড়ানো বা লাফিয়ে লাফিয়ে সিঁড়ি ভাঙ্গা।
“এই গবেষণায় দেখা যায় স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে অল্প পরিমাণ ব্যায়ামও কাজে লাগে যদি সেটা হয় যথেষ্ট জোর দিয়ে করা যেমন জোরে হাঁটা বা দৌড়ানো, সিঁড়ি ভাঙ্গা বা দড়িলাফ খেলা”, বলেন এই গবেষণার সাথে জড়িত গবেষক জেসি ফ্যান।
অবশ্য এই গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্যের মানে এই নয় যে আপনি এক মিনিট ব্যায়াম করেই আত্মসন্তুষ্টিতে ভাসবেন। এটা হল একেবারে ন্যুনতম পরিমাণ ব্যায়াম। যারা ব্যস্ততার জন্য একেবারেই ব্যায়াম করতে পারে না তাদের জন্য এটা প্রযোজ্য। দিনে এক ঘণ্টা করে যদি ব্যায়ামে ব্যয় করতে পারেন তবে তা আপনার জন্য সর্বোত্তম। সময়ের অভাবে ব্যায়াম করা যাচ্ছে না- এই অজুহাতটি বাতিল করে দেবার দিন চলে এসেছে !
MBTV24.Com